ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন
* রাজধানীসহ দেশজুড়ে একের পর এক হত্যা মামলা হচ্ছে * গ্রেফতার হচ্ছেন দলের হেভিওয়েট নেতারা, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সকলস্তরের নেতাকর্মীরা

অস্তিত্ব সংকটে আ’লীগ

  • আপলোড সময় : ২৮-০৮-২০২৪ ১২:৪৭:৩০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-০৮-২০২৪ ১২:৪৭:৩০ পূর্বাহ্ন
অস্তিত্ব সংকটে আ’লীগ
পদত্যাগ করে দলীয়প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার মধ্যদিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটি আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি-না, তা নিয়েও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা সন্দেহ  দেখা দিয়েছে।
তবে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর পরই প্রাণভয়ে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ের নেতারা। এরপর শুরু হয় দেশজুড়ে শেখ হাসিনা ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে গ্রেফতারকৃত নেতাদের পক্ষে আদালতে আইনজীবীও মিলছে না। নেই কোনো দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে করণীয় কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন না দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে- কোনপথে হাঁটছে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। তাদের ভবিষ্যৎ কী?
এর আগে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসীন হয় আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল পথভ্রষ্ট সেনা কর্মকর্তার হাতে নিহত হন বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য। সেই সময় কঠিন রাজনৈতিক সংকটে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। ৪৯ বছর পর সেই আগস্ট মাসেই গণরোষে বাধ্য হয়ে ক্ষমতা ছেড়ে নতুন করে সংকটে  পড়েছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে কথা হয় আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের তৃণমূলের নেতারা বলছেন, সরকার পতন হওয়ার পর থেকে আমরা আতংকে রয়েছি। যে কোনো মুহূর্তে আমাদের ওপর হামল?া-মামলা হতে পারে। দলের এই করুণ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনাও পাচ্ছি না। যারা দলের নাম ভাঙিয়ে অর্থ-সম্পদ অর্জন করেছেন, তারা পালিয়ে গেছেন। আমরা কোথায় যাব? টানা সাড়ে ১৫ বছর রাষ্ট্র শাসন করেও বর্তমানে চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে আওয়ামী লীগ। দেশের প্রাচীনতম দলটি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই যেন হাওয়ায় মিলে গেছে। কোথাও কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। নেই কোনো কর্মসূচি। পরিষ্কারভাবে বর্তমানে রাজনীতিতে একটা কঠিন সময় পার করছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলটিকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল  চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া। সব মিলিয়ে কঠিন এক দুঃসময় পার করছে দলটি। এর আগে, গত ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর হিরকজয়ন্তীও পালন করেছে দলটি। জাঁকজমকপূর্ণ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকালে সর্বত্র আধিপত্য বিস্তার করেন নেতাকর্মীরা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যায়। দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী এখন পলাতক। কেউই এগিয়ে এসে দলের হাল ধরছেন না। পঁচাত্তরের আগে-পরেও আওয়ামী লীগ অনেক দুঃসময় পার করেছে। তবে কখনো নেতৃত্বের সংকট হয়নি দলটিতে।
জিজ্ঞাসাবাদে যা বলছেন সাবেক আইনমন্ত্রী: ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমে খবর এসেছে, আটক হওয়ার পর সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১০ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিন গত বুধবারের জিজ্ঞাসাবাদে দেশে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরির জন্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ওপর দোষ চাপিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে আনিসুল হক বলেছেন, দেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর আমি একটি সমাধানের দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। আন্দোলন দমনে তারা খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিলেন। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ দল ও সরকারের মধ্যে তফাৎ তৈরি করতে পারেনি। সরকারে বিলীন হয়ে যায় আওয়ামী লীগ। টানা ক্ষমতায় থাকায় সুযোগ-সুবিধা নেয়াই ছিল দলটির নেতাকর্মীদের প্রধান লক্ষ্য। দলের অভ্যন্তরে স্বার্থের দ্বন্দ্বে বিভক্তি বেড়ে যায়। ক্রমন্বয়ে দলটির নেতাকর্মীরা জনগণ থেকে দূরে সরে যায়। দায়িত্বশীল নেতারা আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে তখন চিন্তা করেননি। ক্ষমতায় থেকে যে নির্বাচনগুলো আওয়ামী লীগ করেছে, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক ছিল। শেখ হাসিনা সরকার এমন অনেক কাজ করেছে যা আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের দু’জন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা জানান, ক্ষমতার দম্ভ ও শিষ্টাচার বহির্ভূত অসংলগ্ন বক্তব্য দিয়ে ওবায়দুল কাদের শুধু সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের মর্যাদাকেই ক্ষুণ্ন করেননি, ভুল পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে পুরো আওয়ামী লীগের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছেন। দলীয় পদের ক্ষমতাকে কুক্ষীগত ও এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় দলটির অন্য নেতাদের দেয়া অনেক সৎ পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন। কর্মীবান্ধব মনোভাব না থাকায় তারাও থাকতেন সাধারণ সম্পাদক থেকে অনেক দূরে। সাধারণ সম্পাদক পদে টানা তিন মেয়াদে মনোনীত হওয়ার পর ক্ষমতাকে কুক্ষীগত ও একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত, বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতিতে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দেয়া বক্তব্য ও কঠিন চ্যালেঞ্জের সময় তার বিনোদনমূলক কথাবার্তা এবং আচরণ দলের জন্য বড় সংকট হয়ে উঠেছিল। সহজ পরিস্থিতিতে দেখা দেয়া সমস্যাকেও তিনি জটিল রাজনৈতিক করে তুলতেন; সমস্যাকে ‘বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দল। কোটা আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি এত দ্রুত বদলাবে এটাও আমরা ভাবিনি। তিনি বলেন, আন্দোলন ঘিরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়বেন- এটা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি দলের কেউ। তবে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়েছে। নতুন করে এখন দুঃসময়ে পড়েছে দল। এখন সঠিক দিক-নির্দেশনার  জন্যে  অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আরও কোনো পথ নেই।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স